প্রথমবার মুখ খুলে যা বললেন বাশার আল-আসাদ
ভয়েস প্রতিদিন ডেস্ক
আপলোড সময় :
১৭-১২-২০২৪ ০৯:০৮:৩৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১৭-১২-২০২৪ ০৯:১৪:৫৭ অপরাহ্ন
ছবি:সংগৃহীত
বিদ্রোহী যোদ্ধাদের অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পর, প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্ক পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। পালিয়ে যাবার আগে কাউকে কিছু বলে যাননি বাশার।
ফলে বাশার আল-আসাদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর রাশিয়া নিশ্চিত করে আসাদ সেদেশেই আছেন এবং মানবিক কারণে তাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। আসাদের সঙ্গে তার পরিবারও রয়েছে। এরপর আট দিন কেটে গেলেও বাশার আল-আসাদ কোন কথা বলেননি বা বিবৃতি দেননি।
অবশেষে বাশারের একটি বিবৃতি সামনে এলো। সোমবার, মস্কো থেকে এক বিবৃতিতে সাবেক এই স্বৈরাচারী শাসক জানান, সিরিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম দামাস্কাসের দিকে যখন ক্রমে এগিয়ে আসছিল, তখন একবারের জন্য তিনি পদত্যাগ করতে চাননি বা পালিয়ে যেতে চাননি।তার দাবি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি দামেস্কেই ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, আট ডিসেম্বর হায়াত তাহরির আল-শাম এবং অন্যান্য ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা শহরটি দখল করার মাত্র কিছুক্ষণ আগে, সিরিয়ার উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ার কাছে অবস্থিত রুশ বিমান ঘাঁটি, হামিমিমের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখলে নেওয়ার সময় দেশটির লাতাকিয়া প্রদেশে রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটিতে যান বাশার। সেখানে সিরিয়ার কোনও সেনা ছিলো না, সবাই ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায়। ওই প্রদেশের আরেক বিমান ঘাঁটিতে তখন অনবরত ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছিলো। রুশরা তখন তাকে উড়োজাহাজে করে মস্কো পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। লাতাকিয়া প্রদেশের সামরিক ওই ঘাঁটি থেকে বের হওয়ার কোনও পথ না থাকায় মস্কোর অনুরোধে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে দ্রুত রাশিয়ায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেয় ঘাঁটিটির কমান্ড।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলের মাধ্যমে এই বিবৃতিতে দেন আসাদ। দাবি করেন, তাকে নিয়ে ভুল তথ্য ও আখ্যানের বন্যা বইছে। যেগুলোর সঙ্গে সত্যের দূর-দূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, দেশ যখন সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়ে এবং সে পরিস্থিতিতে অর্থপূর্ণ অবদান রাখা আর সম্ভব হয় না, তখন রাষ্ট্রীয় পদে থাকা অর্থহীন। তিনি বলেন, কিছু কিছু জায়গা থেকে দাবি করা হচ্ছে, আমি সিরিয়া থেকে পরিকল্পনা করে প্রস্থান করেছি। কেউ কেউ বলছে, যুদ্ধের একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি পালিয়েছি। এর কোনোটাই সত্যি নয়। আমি ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর, রবিবার ভোর পর্যন্ত দামাস্কাসে থেকে আমার দায়িত্ব পালন করে গিয়েছি। কোনও সময়ে আমি পদত্যাগ করা বা আশ্রয় চাওয়ার কথা ভাবিনি, কোনও ব্যক্তি বা দল এমন প্রস্তাবও দেয়নি। সন্ত্রাসবাদী হামলার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়াই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য।
আসাদ জানিয়েছেন, হামিমিম বিমান ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা হওয়ার পর, তিনি সিরিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। মস্কো তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। নিজেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা এবং পারিবারিক মানুষ বলে দাবি করেছেন আসাদ। গৃহযুদ্ধের সময় তিনি তাঁর দেশের মানুষের পাশে ছিলেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।তিনি বলেন, আমি কখনও ব্যক্তিগত লাভের জন্য পদে থাকতে চাইনি। আমি নিজেকে সবসময় সিরিয়ার জনগণের আস্থাভাজন এক জাতীয় প্রকল্পের অভিভাবক বলে মনে করি। সব শেষে ‘সিরিয়া আবার স্বাধীন হবে’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও, তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বহু মানুষ স্বাধীনতা উদযাপন করতে রাস্তায় নেমেছিলেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেলে বাশার আল-আসাদের ওই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। চ্যানেলটি এখন কে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা জানা যায়নি। আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা বিবৃতিটি বাশার নিজে লিখেছেন কি না, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk
কমেন্ট বক্স